Ads Top

জানিনা জানিনা কেনো এমন হয়

১::
"জানিনা জানিনা কেনো এমন হয়,
তুমি আর নেই সে তুমি"......
কানে হেডফোন আর হাতে গিটার নিয়া রমনার পশ্চিম দিকের নির্দিষ্ট বেঞ্চটায় বসে বসে গান গাইছে উদয়। সবে মাত্র মেডিকেলে ভর্তি হলো। গান গাওয়া খুব শখ ছেলেটার। গলাও ভালোই উদয়ের। কিন্তু বাসায় বাবা-মা কেও তার গান পছন্দ করেন না।তাই পার্কে এসেই গান গায়।
আজকেও গাইছে।
-এক্সকিউজ মি...
-জ্বী বলুন?
-আমি কি আপনার সাথে বসতে পারি?
একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে উদয়ের সামনে, সুন্দরই বলা চলে। দেখতে মনে হয় কলেজ এর ছাত্রী হবে।
-কেনো বলুন তো?
-আসলে আমি রোজ পার্কে দিয়ে যাই,আপনাকে দেখি গান গাইতে। খুব ভালো লাগে,তাই একটু কথা বলতাম।
-ও আচ্ছা, ধন্যবাদ। আপনিই প্রথম মানুষ যে আমার গানকে পছন্দ করলেন।
-আপনার গলা সত্যি খুব সুন্দর, আপনি কিন্তু আমাকে এখনো বসার অনুমতি দেননি।
-সরি, বসুন।
-আমি প্রান্তি, ঢাকা ভার্সিটির ছাত্রী। আপনি?
-আমি উদয়, মেডিকেলে এডমিট হলাম এবার।
-ভালোই। আপনার বাসা কোথায়?
-এইতো মৌচাক। আপনার?
-আশে পাশেই।
কথাটা বলেই মেয়েটা মুচকি হাসলো। স্বর্গীয় হাসি। দেখে মুগ্ধ না হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
-আপনার হাসিটা খুব সুন্দর।
-তোমার ও। সরি তুমি বলার জন্যে,কিন্তু আমি তুমি বলা ছাড়া কথা বলতে পারিনা।
-ইটস ওকে।
-একটা গান শুনাও।
-আচ্ছা।আমি কি তুমি করে বলবো?
-হুম বলতে পারো।
-আচ্ছা।
এই বলে গান ধরলো উদয়,
"আমি আবার আর একটা বার তোমার প্রেমে পড়তে চাই........"
২::
উদয়ের প্রতিদিনের কাজ হয়ে গেছে প্রান্তি কে গান শোনানো। একদিন পার্কে না গেলে সে প্রায় পাগল হয়ে যায়।
আজকে তার জন্য অনেক বড় একটি দিন। প্রান্তিকে মনে মনে খুব ভালোবেসে ফেলেছে সে, আজকে সে বলবেই বলবে।
সুন্দর একটা তুষার শুভ্র শার্ট পড়েছে আজকে। হাতে টকটকে পাঁচটি লাল গোলাপ।
গিটারটা ও নিয়ে নিলো সাথে।
অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে উদয়।
ঐতো প্রান্তি আসছে,কি অপূর্ব লাগছে তাকে।
পৃথিবীর সব সৌন্দর্য যেনো তাকে ঘিরে রেখেছে।
কাছে এসে বসতেই উদয় বললো,
-আজকের আবহাওয়াটা কেমন অন্যরকম অন্যরকম লাগছে না?
-তাইতো দেখছি।
-প্রান্তি, একটা কথা বলতে চাই।
-আগে গান শোনাও।
-কিন্তু.......
-গান গান গান
-আচ্ছা ঠিক আছে।
"মন ভালো নেই,
জানিনা কিছুতেই,
তবু বুঝে নিও,
কে আছে"
গান শেষ করে চোখ খুললো উদয়।প্রান্তি চলে গেছে। উদয় কি করবে বুঝতে পারছেনা, কোথায় গেলো সে? রাগ করলো না তো?
৩::
আজ প্রায় দুই মাস উদয়ের সাথে প্রান্তির কোনো যোগাযোগ নেই, এর কারন কি উদয় জানেনা। প্রায় উন্মাদ সে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর শরীরটা একদম রোগা হয়ে গেছে।
একা গিয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে থাকে,বিড়বিড় করে নিজের সাথে কথা বলে।
প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও বসে আছে। হটাৎ একটি মেয়ে এসে তার পাশে বসলো।
-ভালো আছেন?
-কে আপনি?
-আমি কে এটা না জানলেও হবে। এই নিন।
-কি এটা?
-চিঠি
-কার?
-পড়লেই বুঝবেন
-কিন্তু..
-পড়ুন বলছি
এই বলে মেয়েটা চলে গেলো।
উদয় চিঠি খুলতেই অনেকগুলা গিটার বাজানোর কয়েন পেলো।
চিঠিটা পড়তে শুরু করলো,
"উদয়,
আমি জানি তুমি ভাবছো ঐদিন আমি কেনো চলে আসলাম? এই নিয়ে হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছো, কিন্তু আমার যে কিছু করার ছিলোনা। আমি জানি ঐদিন তুমি তোমার মনে আগলে রাখা ভালোবাসার কথা বলতে এসেছিলে আমার কাছে, কিন্তু কারো ভালোবাসা নষ্ট করার অধিকার যে আমার নেই।
আমার হাইলি হার্ট ডিজর্ডার হয়ে গেয়েছিলো। আমি হলাম এই পৃথিবীর অশ্রুজল, যা খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে গেয়েছিলো।তোমার সাথে কাটানো প্রত্যেকটি মূহুর্ত আমার জীবনের পাতার সবচেয়ে দামী সময়। আমিও তোমাকে প্রথম দিনই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
কিন্তু কি করে বলতাম?
চিঠিটা তুমি যখন পাবে,আমি তখন দূর আকাশ থেকে তোমাকে দেখছি। ভালো থেকো উদয়।
একটা গান শোনাবে?
খুব ইচ্ছে করছে শুনতে"
৪::
রমনা পার্কে সবসময় এক তরুনকে গিটার হাতে দেখা যায়। এক বেঞ্চেই বসে সবসময়।
অনেকেই পাগল বলে।
বেঞ্চে বসে কার সাথে যেনো কথা বলে।একটু পর পর গান গায়।
এখন ও গাইছে,
"হারিয়ে গেছো তুমি ঐ দূর আকাশে,
হারায়নি আমি তোমায় আমার মাঝে।
ভালোবাসি, বেসেই যাবো মরনেরও পরে,
বেচে থাকবে তুমি আমার গানের মাঝে"

No comments:

Powered by Blogger.